ডলারের ‘দাদাগিরি’ এখানেই শেষ! ভারতীয় মুদ্রাতেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সিদ্ধান্ত RBI-র

গত আগস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এরপর থেকে একের পর এক আরও তথ্য উঠে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু ব্যাপারে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। আমরা সবাই জানি, ডলার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের সরকারী মুদ্রা, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বলাই যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর মার্কিন ডলার বিশ্বের বাজারে একচেটিয়া দাদাগিরি করে আসছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে লেনদেন সাধারণত ডলারেই করা হয়। তবে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করে, তবে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে চীন ও রাশিয়া এই মুহূর্তে নিজেদের মুদ্রাতে বাণিজ্য শুরু করেছেন। অন্যদিকে, ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোও নিজেদের মুদ্রাতে বাণিজ্য করার চেষ্টায় রয়েছেন।

এদিকে থেকে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হুংকার দিয়ে উঠছেন। তিনি এটাও জানতে চাইছেন ভারতের থেকে, ভারত কেন রাশিয়ার কাছ থেকে এখনো তেল কিনছে? অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় পণ্যে ইতিমধ্যে শুল্ক বাড়িয়েছেন। এই সমস্ত চলতে চলতে অবশেষে ভারত আর বেশি দিন যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরি বরদাস্ত করবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একপ্রকারে। এবং সম্প্রতি ভারত একটি বড় পদক্ষেপ ঘোষণা করলেন। এবার থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লেনদেন নিয়ে বড় পদক্ষেপ নিল ভারত। ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেন যাতে বাড়ানো যায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, তার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে বিদেশি ব্যাংকের জন্য স্পেশাল রুপি ভসট্রো অ্যাকাউন্ট(SRVA) খোলার অনুমতি দিল। অর্থাৎ চীন ও রাশিয়ার মতো এবার ভারত নিজেদের মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেন করার সিদ্ধান্ত নিল অবশেষে।


অন্যদিকে, আগস্ট থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক কর বাড়িয়েছেন। এর কারণ হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ না করায়, শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। এবং এখানেই তিনি থেমে যাননি। তিনি এই মুহূর্তে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, যদি ব্রিকস এর সদস্য দেশগুলি নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন অব্যাহত রাখে, তাহলে ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপাবেন। অর্থাৎ শুল্ক আলো বৃদ্ধি করার হুঁশিয়ারি দিলেন। এছাড়া তিনি আরও জানান, আমেরিকার বিরোধী ব্রিকসের কোনও নীতি যদি কোনও দেশ গ্রহণ করে, তাহলে ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। ইতিমধ্যে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, যদি ব্রিকস-র সদস্য দেশগুলি নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করে, তবে ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপাবেন। তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, আমেরিকার বিরোধী ব্রিকসের কোনও নীতি যদি কোনও দেশ গ্রহণ করে তবে ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে।

আরোও পড়ুন:- গুগল-মাইক্রোসফটের বদলে ভারতীয় অ্যাপ ব্যবহার করার ওপর জোর কেন্দ্রীয় সরকারের, আমেরিকার অর্থনীতি পড়তে চলেছে চাপে

তবে ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সমস্ত হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে চীন ও রাশিয়া তাদের নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন করতে শুরু করে দিয়েছেন। অন্যান্য ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিও সেই চেষ্টাতেই রয়েছেন। এমনকি ভারত নিজেদের মুদ্রাতে বাণিজ্যিক লেনদেনের পদক্ষেপ নিয়ে নিয়েছেন ইতিমধ্যে।

যদিও বছর তিনেক আগেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনীর পদক্ষেপ নেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল আরবিআই। তখন বলা হয়েছিল, অথরাইজড ডিলার ব্যাঙ্কগুলি আরবিআইয়ের অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশি ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের সেটেলমেন্টের জন্য স্পেশাল রুপি ভসট্রো অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। তবে সময় ও পরিস্থিতির কারণে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু এখন ট্রাম্প এর দাদাগিরি আর বরদাস্ত না হওয়ায়, আরবিআই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল। আরবিআই একটি বিজ্ঞপ্তি তো জানিয়েছেন, দেশের অথরাইজড ডিলার ব্যাংকগুলো RBI এর অনুমতি ছাড়াই এই অ্যাকাউন্টগুলি খুলতে পারবে। অথরাইজড ডিলার ব্যাঙ্কগুলি। তবে ব্যাঙ্কগুলিকে ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ও কেওয়াইসি নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে। স্পেশাল রুপি ভসট্রো অ্যাকাউন্ট খোলা হলে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রা সেটেলমেন্টের অনেক সুবিধা হবে।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এর দাদাগিরি আর বেশি দিন চীন, রাশিয়া ছাড়াও ভারত মানতে আর রাজি নয়। এইবার থেকে ভারতের দেশীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

Join Group Join Group