বর্তমানে এন্ড্রয়েড ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত চলা সম্ভব নয়। বিশেষ করে এন্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে থাকা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা google বিশ্বের সমস্ত রকম সমস্যার সমাধান এবং সমস্ত ধরনের প্রশ্নের উত্তরের ভান্ডার নিয়ে সব সময় এগিয়ে রয়েছে। এইজন্য দিন প্রতিদিন গুগল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে। প্রত্যেকটি ব্যক্তির কাছে যেকোনো অজানা জিনিসকে জানতে জাস্ট এক সেকেন্ডের একটি সার্চ অপশন ক্লিক করলেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর একদম চোখের সামনে চলে আসে। কিন্তু জানেন কি এই google মাইক্রোসফট ব্যবহার করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর বদলে ভারতীয় অ্যাপ ব্যবহার করার কথা বলছেন মোদির মন্ত্রীরা।
বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তিন মন্ত্রিসভার সদস্য গুগল হোয়াটসঅ্যাপ এবং মাইক্রোসফটের ব্যবহার কমিয়ে দেশীয় app ব্যবহারের প্রচার করছেন। অর্থাৎ দেশীয় অর্থনীতি কে আরো উচিত তোলার এটি একটি প্রধান পদক্ষেপ। অন্যদিকে আমেরিকার অর্থনীতিকে কিছুটা চাপে ফেলার চেষ্টাই করছেন নরেন্দ্র মোদি।
কিন্তু কেন এই প্রয়াস? হঠাৎ করে এতদিনের এক ক্লিকে অজানাকে জানার এই অ্যাপ যার নাম google, এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও মাইক্রোসফট এর মতন দুর্দান্ত অ্যাপ গুলোকে ব্যবহার না করার কথা কেন বলা হচ্ছে? এর কারণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, যার ফলে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার এমনই একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার অনেক আগের থেকেই মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্যের পক্ষে জোর দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। অর্থাৎ ভারতে তৈরি পণ্যের ওপর বেশি করে নির্ভর করার কথা বলার হচ্ছে দেশবাসীকে।
প্রসঙ্গত, গত আগস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। আর এরপর থেকে নরেন্দ্র মোদী দেশীয় পণ্য ব্যবহারের উপর দেশবাসীকে জোর দেওয়ার প্রতিষ্ঠান ও প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন আরো বেশি করে। তিনি জানান ভারতীয়দের দেশি পন্যকে সাদরে আমন্ত্রণ করতে এবং বিদেশি পন্যকে বর্জন করার কথা বলেন।
আরোও পড়ুন:- ৫টি লো-ইনভেস্টমেন্ট বিজনেস আইডিয়া যা সবসময় লাভজনক
সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, এই সপ্তাহের মধ্যেই মহাসড়ক প্রকল্প উপস্থাপন করেন। এটি তৈরি হয়েছে মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট নয়, বরং দেশীয় প্রতিষ্ঠান জোহোর সফটওয়্যার হিসেবে এবং গুগল ম্যাপস ছাড়াই এটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ম্যাপটি ম্যাপমাইইন্ডিয়ার। গত সপ্তাহে তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব একটি ভিডিওবার্তায় জোহো সফটওয়্যার পরীক্ষা করে দেখান এবং মানুষকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের ওই পোস্ট ৬২ লাখবার দেখা হয়েছে।
যদিও, এই তিন মার্কিন কোম্পানি রাইটার্সের মন্তব্যের অনুরোধে এখনো সাড়া দেননি। বিদেশি মাইক্রোসফটওয়ার সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলোতে বহুল ব্যবহৃত হয়। ভ্রমণকারীরা পথ খুঁজতে google ম্যাপস ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি। মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়, ভ্রমণকারীরা পথ খুঁজতে গুগল ম্যাপস ব্যবহার করেন এবং হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত—ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি।
তবে, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের নিজস্ব জোহো মাইক্রোসফটের ক্লাউডভিত্তিক সফটওয়্যারের সস্তা বিকল্প সুবিধা দেবে ভারতবাসীকে। এই কোম্পানিটির কোটিপতি সহপ্রতিষ্ঠাতা শ্রীধর ভেম্বু গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা পরিচালনার অনন্য পদ্ধতির জন্য পরিচিত রয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ও শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের প্রচেষ্টায় তাঁদের মেসেজিং অ্যাপ ‘আরাট্টাই’ (তামিল ভাষায় ‘চ্যাট’) সম্প্রতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
গোয়েল এক্সে লিখেছেন, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া প্ল্যাটফর্ম আরাট্টাইয়ে থাকতে পেরে তিনি গর্বিতবোধ করছেন, এটি ভারতীয়দের আরও ঐক্যবদ্ধ করবে দেশি পণ্য ব্যবহারের জন্য।
বাজার বিশ্লেষণ সংস্থা সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে অ্যাপটি ৪ লাখেরও বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে, যেখানে আগস্টে ডাউনলোডের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও কম। সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখে এর দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক লাফে ১ লাখে পৌঁছে গিয়েছে। যেটি আগস্টের তুলনায় ১০০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ ভারতবাসী তার দেশীয় জিনিস ব্যবহারের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন যা বিদেশি পণ্য বর্জনের আশা রাখে।
তবে এটাও সঠিক যে, ভারতীয় কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক ব্যান্ডের বিকল্প হতে পাড়া অনেকটাই কঠিন। বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাও সঠিক পথ নয়। কারণ আত্মিক সামর্থ্য বাজার বিস্তারের ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা পিছিয়ে আসতে পারে ভারত। অন্যদিকে 2021 সালে ভারতীয় মন্ত্রীরা আমেরিকান টুইটারের বিকল্প হিসেবে দেশীয় প্ল্যাটফর্ম কু-কে প্রচার করেছিলেন কিন্তু ততদিন সংকটের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গত বছরই বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতীয় জনসংযোগ সংস্থা পারফেক্ট রিলেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা দিলীপ চেরিয়ান জানিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যকে আগামীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে চলবে না, জোহর মতো ব্রান্ড সফল হতে গেলে নতুন বৈশিষ্ট্য ওর নতুনত্ব থাকা দরকার এছাড়া বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন বিশেষ করে নজরদারি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতবাসীকে আরো বেশি করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। বিশেষ করে আমেরিকার তৈরি করা হোয়াটসঅ্যাপ গুগল মাইক্রোসফট ওয়ার্ড পরিত্যাগ করার কথাই প্রচার করছেন। যদিও এখনো জোহর মতন ভারতীয় ব্র্যান্ড সফলতা পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই আহবান কিছুটা হলেও আমেরিকার অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে।