বর্তমানে যেকোনো সরকারি পরিষেবা ডিজিটাল মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে যেমন প্রত্যেকটি সাধারণ নাগরিকের সময় বেঁচে যাচ্ছে, ঠিক তেমন অফিসিয়াল জায়গায় গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিসিয়ালি কাজ করার থেকে বাড়িতে বসে করার ফলে পরিশ্রম অনেকটাই কম হচ্ছে। মৃত্যু শংসাপত্র আপনি বাড়িতে বসেই আবেদন করতে পারবেন এখন থেকে। কিভাবে আবেদন করবেন তার সহজ পদ্ধতি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।
মৃত্যু শংসাপত্র হলো যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয় এবং সেই মৃত্যুকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য যে সরকারি নথি প্রদান করা হয় সেটাই হলো মৃত্যু শংসাপত্র। এই নথিতে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর তারিখ, সময়, স্থান এবং মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা থাকে।
মৃত্যু শংসাপত্রের প্রয়োজন কেন রয়েছে: একজন ব্যক্তির মৃত্যু হলে সেই ব্যক্তির নামে যদি কোন বীমা করানো থাকে সে বিমাকৃত অর্থ নমিনি যার নামে রয়েছে তিনি সেই অর্থ পাওয়ার জন্য মৃত্যু শংসাপত্রের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া জমির মালিকানা বা বাড়ির মালিকানা হস্তান্তর আরো সরকারি কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য মৃত্যু শংসাপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির নামে যে ব্যাংক একাউন্ট খোলা রয়েছে সেটি বন্ধ করার জন্য মৃত্যু শংসাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরোও পড়ুন: ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কে ১৭১ শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ, জেনে নিন আবেদন পদ্ধতি সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য
মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর ২১ দিনের মধ্যে মৃত্যু শংসাপত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদন নিবন্ধন ফি হিসেবেমৃত ব্যক্তির মৃত্যুর ২১ দিনের মধ্যে আবেদন করলে ১০ – ২০ টাকা এবং ২১ দিন পরে ২৫ – ১০০ টাকা ধার্য করা হয়।
মৃত্যু শংসাপত্রের গুরুত্ব কি: একজন ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার পরে তার নামে মৃত্যু শংসাপত্র আবেদন করা অত্যন্ত দরকারি একটি প্রক্রিয়া। যদি উপরে সংক্ষেপে এই সম্পর্কে জানানো হয়েছে তবে বিস্তারিত জানানো হলো নিম্নে:-
১) মৃত্যুর আইনি প্রমাণ: একটি মৃত্যু শংসাপত্র একজন ব্যক্তির মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক প্রমাণ হিসাবে সরকার কর্তৃক জারি করা হয়।
২) সম্পত্তি নিষ্পত্তি: এই শংসাপত্র মৃত ব্যক্তির সঙ্গেসম্পর্কিত ব্যক্তিদের সম্পত্তি এবং সম্পত্তির আইনি নিষ্পত্তি করার অনুমতি প্রদান করে।
৩) জীবন বীমা: মৃত ব্যক্তির নামে যদি কোন বীমা করা থাকে, তাহলে সেই বীমা কোম্পানি তাদের পলিসির তহবিল মৃত ব্যক্তির নমিনি হোল্ডারের হাতে বীমাকৃত অর্থ তুলে দেন। এর জন্য মৃত্যু সনদপত্রের প্রয়োজন রয়েছে।
৪) পেনশন দাবি: সরকারি বা বেসরকারি পেনশন প্রকল্পের জন্য দাবি জানাতে বা স্থানান্তর করতে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তির মৃত ব্যক্তির নামে মৃত্যু সনদপত্র প্রমাণ হিসেবে দাখিল করতে হয়।
৫) উত্তরাধিকার: আইনি উত্তরাধিকারীদের উত্তরাধিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সম্পত্তির দাবি জানাতে মৃত ব্যক্তির শংসাপত্রের প্রয়োজন রয়েছে।
আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট :-
১) মৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রমাণ
২) মৃত্যুর প্রমাণ
৩) হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ রিপোর্ট
৪) মৃত ব্যক্তির বিবরণ এবং আবেদনকারীর সাথে সম্পর্কের হলফনামা
৫) সম্পর্কের প্রমাণ
৬) বসবাসের প্রমাণপত্র
৭) দাফনের সার্টিফিকেট
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি :-
অনলাইনে কিভাবে আবেদন করবেন তা ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।
ধাপ ১: সর্বপ্রথম, আপনার রাজ্য বা অঞ্চলের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন যেখানে হয় সেই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করুন।
ধাপ ২: মৃত্যু শংসাপত্রের জন্য আপনি কোথায় অনুরোধ/আবেদন করতে পারবেন তা নির্ধারণ করুন। মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য, যেমন পুরো নাম, তারিখ, মৃত্যুর স্থান ইত্যাদি তথ্য দিয়ে আবেদন পত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
ধাপ ৩: আবেদনপত্রের মধ্যেই মৃত্যুর কারণ বলে যে অপশনটি থাকবে সেখানে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মেডিকেল সার্টিফিকেট বা অন্য কোন প্রাসঙ্গিক সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করুন।
ধাপ ৪: আবেদন পত্র সমস্ত বিবরণ সঠিকভাবে পূরণ করার পর আবেদন পত্র জমা দিন অর্থাৎ সাবমিট করুন। এরপর আপনি একটি রেফারেন্স নম্বর পাবেন সেটি কপি করে নিজের কাছে রাখুন কারণ এটি পরবর্তী রেফারেন্সের জন্য প্রয়োজন পড়বে।
ধাপ ৫: আবেদনের জন্য আপনাকে কিছু অল্প চার্জ দিতে হবে। সেটি আপনি ব্যাংকিং যে কোন মাধ্যমে অর্থাৎ ডেবিট ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং ইউপিআই এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন।
ধাপ ৬: আবেদনপত্র যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল আইডিতে নিশ্চিতকরণ পাঠানো হবে, এরপর আপনি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে কপি করে নিতে পারেন। এছাড়াও আবেদনপত্রে আপনার দেওয়া নিবন্ধিততো ঠিকানায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আপনার বাড়িতে মৃত্যু সনদপত্র পেয়ে যাবেন।